৬ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা

শিশুর বয়স ছয় মাস পর পর মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা । কিন্তু আপনি জানেন কি এই যে আপনার শিশু আসলেই বাড়তি খাবারের জন্য প্রস্তুত কি না। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বলছে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা থেকে বোঝা যায় যে শিশুর বাড়তি খাবার দরকার ।

আপনার শিশু যদি রাতে ঘুম থেকে উঠে যায় এবং ঘুম থেকে ওঠার পরে খাবার খুঁজতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে তার শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুততর হচ্ছে এবং তার অতিরিক্ত খাবার দরকার। এছাড়া আপনার শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখায় মাথা সোজা করে বসার চেষ্টা করে বসে খেলনা বা হাতের কাছে কিছু পেলে যদি সেটা মুখে দেয় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার শিশুর বাড়তি খাবার দরকার ।

Advertisements

৬ মাস বয়সী শিশুদের খাদ্য তালিকা

Baby Food Recipes For 6 Months

শিশুর জন্মের 181 তম দিন থেকে বুকের দুধ ছাড়াও অন্যান্য খাবার দেয়া যেতে পারে। মায়ের বুকের দুধে যে ধরনের উপাদান থাকে সাধারণত সে ধরনের উপাদান হজম করার সক্ষমতা শিশুর থাকে । যেমন মায়ের বুকের দুধে প্রচুর পরিমান কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন থাকে । তাই কার্বোহাইড্রেট রয়েছে এমন খাবার প্রথমে দিতে হবে। যেমন আলু চটকানো শিশুকে এগুলো মুখে দিয়ে দেখতে হবে যে সে কতটুকু নিতে পারে।

শিশুদের কি ধরনের খাবার দেয়া উচিত

শিশুদের শুরুতেই ফলমূল এবং শাকসবজি দেয়া যেতে পারে । যেমন গাজর, মিষ্টি আলো, মিষ্টি কুমড়া, আলু, মিষ্টি স্বাদের সবজি ইত্যাদি থাকতে পারে তালিকায়। ফলের মধ্যে আপেল, নাশপাতি এবং কলা দিতে পারেন। শুরুতে যেকোনো একটি সবজি ফল দিয়ে শুরু করতে হবে । যেমন শুধু আপেল কিংবা শুধু গাজর, পরে ধীরে ধীরে সবজি মিক্স করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে এসব খাবারে কোন চিনি লবণ দেয়া যাবেনা ।

পুষ্টিবিদ শারমিন আক্তার জানান অনেকে শিশুদের ডিমের কুসুম দিতে বলেন কিন্তু শিশুরা ডিমের কুসুম সরাসরি খেতে পারে না । এ ছাড়া ডিমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকতে পারে যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে কুসুম না হলেও ডিমের সাদা অংশ থাকে সেটি অবশ্যই দেয়া যেতে পারে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে অনেক সময় ডিমে এলার্জি থাকতে পারে পুষ্টিবিদরা বলছেন।

যেকোনো নতুন খাবার দেয়ার সময় বুঝে নিতে হবে যে শিশু সেটি হজম করতে পারছে কিনা। কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। কারণ এই বয়সে ডায়রিয়া হলে সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। অনেকে বাচ্চাকে বাজার থেকে কেনা সেরেলাক দিয়ে থাকেন । তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন যে বাজার থেকে কেনা সেরেলাক শিশুকে না দেওয়াটাই ভালো । ঘরে সেরেলাক তৈরি করা যায় বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা সেক্ষেত্রে চালের গুড়া খাওয়ার তেল ও পানি মিশিয়ে সেরেলাক তৈরি করা যায়।

শিশুর খাবার কিভাবে তৈরি করবেন

শিশুর খাবার তৈরি করার সময় মাথায় রাখতে হবে যে সেটা যাতে পুরোপুরি ব্লেন্ড করে ফেলা না হয় । সিদ্ধ কোন কিছু খেতে দেয়া হলে তা তৈরি করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে সেটা যাতে একেবারে মিশে হয়ে না যায়। হাতে চটকে যতটুকু গলানো যায় বা ডাল ঘুটনি দিয়ে যত মসৃণ করা যায় ততটুকুই রাখতে হবে ।

Advertisements

6 মাস বয়সের পর পরই শিশুকে খিচুড়ি দেওয়াটা উচিত নয় বলে মনে করেন পুষ্টিবিদ্যা । তবে খাবারের সাথে কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর তাদেরকে খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে খিচুড়ি রান্না করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে খিচুড়িতে চাল যতোটুকু দিতে হবে তার অর্ধেক দিতে হবে ডাল । আর সবজি দিতে হবে এক টুকরা পরিমাণ । মাছ-মাংস যাই হোক সেটাও হবে এক টুকরা পরিমাণ । অর্থাৎ 30 গ্রামের মতো, শারমিন আক্তার বলেন অনেকে পাঁচ মিশালি ডাল দিয়ে থাকেন যা মোটেই উচিত নয় ।

এত কম বয়সী শিশুদের পুষ্টির দরকার হয় না বলে তিনি মনে করেন। বেশিরভাগ পুষ্টি সে তার মায়ের বুকের দুধ থেকে পায় । পুষ্টিবিদরা বলছেন শিশুদের জুস, যেমন-কমলার জুস এগুলো নয় মাস বয়সের পর থেকে দিতে হবে । তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেটি হচ্ছে জুসের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে তারপর শিশুকে খেতে দিতে হবে । যাতে হজমে সমস্যা না হয় ।

তবে এ সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে কারণ এই বয়সে শিশু খুঁটে খুঁটে খেতে থাকে । আবার পড়ে গেলে সেটি তুলে আবার মুখে দেয় দুই বছর বয়সের পর ঘরে তৈরি আইসক্রিম দেয়া যেতে পারে । পুষ্টিবিদ সর্দার শারমিন আক্তার বলেন 6 থেকে 9 মাস বয়সের শিশুদের মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি মাত্র 270 কিলোক্যালরি দরকার হয়।

9 মাসের পর থেকে এক বছর পর্যন্ত 451 কিলোক্যালরি আর এক থেকে দুই বছরের মধ্যে শিশুদের মাত্র 748 কিলোক্যালরি দরকার হয় । এই খাবার খাওয়ানোর নিয়ম হচ্ছে 6 থেকে 9 মাস বয়সের জন্য । আধাকাপ পরিমাণ দিনে দুইবার দিতে হবে । মাঝে একবার স্ন্যাকস দেয়া যেতে পারে এ ধরনের খাবার নয় মাস থেকে 1 বছর আধা কাপ করে তিন বার এবং দিনে দুইবার খাবার দেয়া যায়।

এক থেকে দুই বছর বয়সীদের জন্য স্বাভাবিক খাবার দিনে তিনবার দেয়া যায়। যেমন ফলমূল হালুয়া ইত্যাদি বানিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে এই পরিমাণ এর পুরো খাবার যদি শিশু খেতে না পারে তাকে জোর করে খাওয়ানো যাবে না। পুষ্টিবিদরা বলছেন 20 থেকে 25 মিনিটের মধ্যে যতো টুকু খায় তাকে ঠিক ততটুকুই খাওয়াতে হবে ।

বেশি সময় ধরে খাওয়ালে খাবারের পুষ্টিগুণ থাকে না । অনেকে শিশুকে ঘি খাওয়াতে চান । তবে নয় মাস বয়সের আগে ঘি এর পরিবর্তে সাধারন রান্না করার তেল দেয়াটাই সবচেয়ে ভালো বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। আইসক্রিম, চকলেট, চিপস এগুলো না দিয়ে সবচেয়ে ভালো দুধের তৈরি জিনিস অতিরিক্ত লবণ বা অতিরিক্ত চিনি কোনটাই দেয়া যাবেনা ।

এক বছর বয়সের আগে শিশুদের মধু দেয়াটা নিরাপদ নয় কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। তবে এক বছর বয়স হয়ে গেলে তখন নিশ্চিন্তে দেয়া যাবে ।

Advertisements

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top