পান্তা ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা

পান্তা ভাতের উপকারিতা ও অপকারিতা


প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে পান্তা ভাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তবে আপনি জানেন কি, যে পান্তা ভাতে কি কি উপাদান আছে । আর এটি শরীরের জন্য আসলে কতটা উপকারী । ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভালো নাকি খারাপ এ পান্তাভাত। এসব বিষয়ে জানতে পান্তাভাতের ওপর এই গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীদের একটি দল। ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয় । দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেসব অঞ্চলে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয় এবং যেসব দেশে ভাত প্রধান খাবার । মূলত সেসব দেশে পানিতে ভিজে খাওয়ার সংস্কৃতি চালু আছে এসব এলাকার আবহাওয়া অত্যন্ত গরম এবং আদ্র হওয়ার কারণে খুব সহজেই ভাত নষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু পানিতে ভিজিয়ে রাখার কারণে এই খাবার দ্রুত নষ্ট হয় না । 

Advantages and disadvantages of panta rice

সংরক্ষণ কথা বিবেচনা করেই এই পান্তাভাতের প্রচলন শুরু হয়। সাধারণত আগের দিন রাতের বেঁচে যাওয়া ভাত পানি দিয়ে পান্তা ভাত তৈরি করা হয়। একটি পাত্রের মধ্যে পরিষ্কার পানি এবং ভাত একসঙ্গে মিশিয়ে সেটি ঢেকে রাখা হয়। এভাবে দশ বারো ঘন্টা ধরে সারারাত রেখে দেওয়ার ফলে পানি এবং ভাতের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় । 

এ সময় পানির নিচে থাকা ভাত বাতাসের অর্থাৎ অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসতে পারে না । বিজ্ঞানীরা বলছেন পানির কারণে ভাতের এই ফারমেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং পাত্রের ভেতরে এনালগ ফারমেন্টেশন এর ঘটনা ঘটে গবেষকরা বলছেন এই প্রক্রিয়ায় ভাতের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট ভেঙে যায়। এছাড়াও ভাতের মধ্যে ফাইটের মত যেসব এন্ড নিউট্রিশন অলফ্যাক্টরি থাকে সেগুলোর ক্ষয় হয় এবং হাতটাও হাইড্রেট হয়ে থাকে বলে গবেষণায় দেখা গেছে । পান্তাভাতে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-বি ইত্যাদি।

সাধারণভাবে তুলনায় পান্তাভাতে এসব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে বলে দেখেছে গবেষক দল। যেমন 100 মিলিগ্রাম সাধারণভাবে আয়রনের পরিমাণ থাকে 3.5 মিলিগ্রাম । কিন্তু 12 ঘন্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তাভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে 73 দশমিক 9 মিলিগ্রামের দাঁড়ায় । একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় 100 মিলিগ্রাম সাধারণভাবে যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে 21 মিলিগ্রাম সেখানে পান্তাভাতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় 850 মিলিগ্রাম । গবেষকরা বলেছেন ফারমেন্টেশন এর কারণে পান্তাভাতের ফাইটের দুর্বল হয়ে পড়ে।

তখন পুষ্টিকর পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়লে আমাদের শরীর সেগুলো গ্রহণ করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন পান্তাভাতের থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আয়রন যেটা পান্তাভাতের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় জানিয়েছেন গবেষকরা শরীরের হাড় গুলো কে শক্ত রাখে। ক্যালসিয়াম শরীরে নিঃসৃত এনজাইম কে সক্রিয় করতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম এছাড়াও তারা গবেষণায় দেখেছেন যে পান্তাভাতে প্রচুর পরিমাণে টেস্টোস্টেরনের মত মেটাবলাইটস রয়েছে । যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। কোলেস্টেরল কমাতে ও এসব উপাদান সাহায্য করে। 

গবেষণায় দেখা গেছে পান্তাভাতের ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দইয়ের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় । এছাড়াও গরমের সময়ে পান্তাভাত শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে । আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় পান্তাভাতের কোন খাদ্যে পাওয়া যায়নি । তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই খাবার ক্ষতিকর কিনা সেটা জানতে তারা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

গবেষকদের মতে 12 ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরী হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজম্যাজ করে এবং ঘুম পেতে পারে । এছাড়াও পান্তাভাত যদি পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয় তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে । সেই ভাত খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষক দল।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ আসাম বিহার উড়িষ্যা দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু অন্ধ্রপ্রদেশে কেরালা এসব অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার এই পান্তাভাত । তবে একেক জায়গায় পান্তা ভাতকে একেক নামে ডাকা হয় । থাইল্যান্ড মিয়ানমার-চীন ইন্দোনেশিয়াতে ও ফারমেন্টেড রাইস খাওয়া হয় । তবে সেটা তৈরি করার প্রক্রিয়া এবং স্বাদ পান্তা ভাতের চেয়ে আলাদা।

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top